সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭২

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল (১৯৭২-১৯৭৫) | | NCTB BOOK

পটভূমি:

সংবিধান একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল । এই দলিল লিখিত বা অলিখিত হতে পারে । বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল । দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ এই সংবিধান লাভ করে । উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে । দুই বছরে ভারত সংবিধান প্রণয়নে সফল হলেও পাকিস্তানের সময় লেগেছে ৯ বছর, তাও তা কার্যকর হয়নি। অপরপক্ষে মাত্র ৯ মাসে সদিচ্ছা, আন্তরিকতা আর জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি সৎ থেকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর সংবিধান প্রণীত হয়েছে বঙ্গবন্ধু সরকারের নেতৃত্বে ।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩শে মার্চ ‘গণপরিষদ আদেশ জারি করে। এই আদেশটি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয় । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয় । বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নই ছিল গণপরিষদের একমাত্র কাজ ।

এই আদেশ জারির মধ্য দিয়ে সংবিধান প্রণয়নের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় । আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি বঙ্গবন্ধুকে গণপরিষদের সংসদীয় দলীয় নেতা নির্বাচন করে। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল । বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গণপরিষদের প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হন শাহ আবদুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ উল্লাহ । দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় । ড. কামাল হোসেন এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন । কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৪। কমিটি ১৯৭২ সালের ১১ই অক্টোবরের মধ্যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কাজ শেষ করে। ১৯শে অক্টোবর থেকে সংবিধান বিল সম্পর্কে গণপরিষদে সাধারণ আলোচনা শুরু হয় । দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সংবিধান বিল গণপরিষদে পাস হয় । ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে সংবিধান কার্যকর হয় । গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'এই সংবিধান শহিদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে ।

Content added By
Promotion